অপরিচিতা গল্পের মূল কথা - অপরিচিতা গল্প

 আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা অনেকেই অপরিচিতা গল্প করে বুঝতে পারি না এর মূল কথা কি? তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে অপরিচিত গল্পের মূল কথা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

অপরিচিতা গল্পের মূল কথা

একাদশ শ্রেণীর অপরিচিতা গল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গল্প। এই গল্পটি ভালোভাবে আয়ত্ত করার বা বোঝার মাধ্যমে আপনি পরীক্ষায় ভালোভাবে লিখতে পারবেন। যদি ভালোভাবে জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অপরিচিতা গল্পের মূল বিষয়বস্তু

অপরিচিতা গল্পটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অপরিচিতা গল্পটি নারীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য মূলত লিখা হয়েছিল।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অপরিচিতা এই গল্পটিতে মূলত মনস্তাপে ভেঙে পড়া, ব্যক্তিত্বহীন, আত্মসম্মান বোধহীন এক যুবকের স্বীকারোক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সেই যুবকটির নাম ছিল অনুপম। অনুপম শিক্ষিত এবং তার বয়স ২৭ হলেও সে নিজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সে একজন যুবক হিসেবে তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য কিছুই সে নিতে পারে না কেননা তাকে সেই সুযোগটাই দেওয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে দেখা দিয়েছে, তার বয়স ২৭ হলেও সে সম্পূর্ণ তার মা এবং মামার উপর নির্ভরশীল। সে কোন মেয়ে বিয়ে করবে, কিভাবে বিয়ে করবে এই সমস্ত নিজের বিষয়েও তার কোন মতামত ছিল না। তার সবকিছুই নির্ধারণ করত তার মা এবং মামা। 
অনুপমের মামা ছিল অত্যন্ত লোভী স্বভাবের লোক। সে সবসময় ভাবতো অনুপম অর্থাৎ তার ভাগিনার বিয়ে এমন জায়গায় দিবে যে পরিবারে সে সবসময় মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে। অনুপমের মামার চিন্তা ছিল তার ভাগিনাকে তাদের থেকে অসচ্ছল কোন পরিবারে বিয়ে দিবে যার ফলে তাদের প্রতি সে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। 

অনুপমের অনেক বয়স হয়েছে বিবাহ দেওয়ার প্রয়োজন যার কারণে পাত্রী খোঁজা হচ্ছে কিন্তু সেই ব্যাপারে অনুপমের কোন সিদ্ধান্ত নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে একজন পাত্রীকে পাওয়া গেল যার সাথে অনুপমের বিয়ে ঠিক হলো, যেদিন বিয়ে হবে সেদিন অনুপমের মামা বলে যে যৌতুক ছাড়া আমরা বিয়েতে বসবো না। কন্যার বাবা এক পর্যায়ে যৌতুক দিতে রাজি হয়। 

কিন্তু অনুপমের মামা ছিল অত্যন্ত লোভী এবং ছোটলোক বা ছোটমনের মানুষ সে হঠাৎ করে বলে উঠল যে আপনি যে গহনা গুলো এনেছেন সেগুলো আসল কিনা এবং পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা মাপতে চাই। কিন্তু বাহিরে যে গহনা গুলো ছিল এগুলোতো মাপা যায় কিন্তু কন্যার গায়ে যে গহনাগুলো রয়েছে সেগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব !

তখন পর্যন্ত অনুপমের মামা বলেন কন্যার গা থেকে গহনা গুলো খুলে আনা হোক আমি পরীক্ষা করব। এই কথাতে শম্ভুনাথ বাবু অর্থাৎ কন্যার পিতা সে খুব অবাক হয়ে গেল যে কন্যার গা থেকে কিভাবে গহনা গুলো খোলা যায়। তখন শম্ভুনাথ বাবু অর্থাৎ কল্যাণীর পিতা তার জামাই অর্থাৎ অনুপম কে জিজ্ঞাসা করলেন যে ,বাবা তোমার মামা তো বলছেন গহনা খুলে আনতে এ ব্যাপারে তুমি কি বলতে চাও। 

স্বাভাবিকভাবে অনুপম কিছু বলতে পারেনা। অনুপম বললেন এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তখন শম্ভুনাথ বাবু বুঝে গেলেন যে এই ছেলের নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই তখন সে তার মেয়েকে অর্থাৎ কল্যাণীকে তার সাথে বিয়ে দিতে নাকোচ করে। শম্ভুনাথ বাবু ছিলেন একজন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি সে চিন্তা করলেন মেয়ের লগ্নভ্রষ্টা হবে কিন্তু এই ছেলের কাছে তাকে বিয়ে দেব না। 

কিন্তু তাই বলে অনুপম এবং অনুভূমের পরিবারের উপর তিনি কোন অযত্ন করেননি। তিনি সমস্ত গহনা খুলে আনছেন সেগুলো মাপা হলো কিন্তু সেগুলো একটু কম হয়নি বরং একটু বেশি আছে সেগুলো দেখে অনুপম এর মামা অত্যন্ত চমকে গেল। তার মামা ভাবছিল তখন একটু কম হবে কন্যার পিতাকে একটু কথা শোনাবো কিন্তু সেটি আর হলো না।

বিয়েতে বসার সময় শম্ভুনাথ বাবু বললেন অনুপম এর মামাকে উদ্দেশ্য করে যে তোমাদের গাড়ি বহর নেই ?কেননা, তিনি তার মেয়েকে আর বিয়ে দিবেন না তাদের সঙ্গে। এই কথা থেকে বোঝা যায় শম্ভুনাথ বাবু একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। অপরদিকে কল্যাণের চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশের জন্য মেয়েদের যে ভূমিকা সেটি তুলে ধরেছেন। 
নারীদের সাহায্য এবং সহযোগিতা ছাড়া সমাজে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধুমাত্র তাই নয় এই যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধেও এই যে এই যে শম্ভুনাথ বাবু ও কল্যাণীর মতো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধী এই যৌতুক প্রথা কে ঠেকিয়ে দিতে পারে,থামাতে পারে, দমাতে পারে। 

যে সময়ের কথাটি গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে সে সময়টিতে মূলত মেয়েদের পড়াশোনার কোন স্বাধীনতা ছিল না কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্যাণের চরিত্রের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে, মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের যৌতুকের মতো সামাজিক কু-প্রথার অংশগ্রহণ করতে পারে।

অপরিচিতা গল্পের মূল চরিত্রসমূহ

  • অনুপম
  • মামা
  • শম্ভুনাথ বাবু
  • কল্যাণী
  • অন্যান্য

অপরিচিতা গল্পের লেখক পরিচিতি

নাম                     : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্মতারিখ          : ৭ মে, ১৮৬১ খ্রি: (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮)
পিতার নাম         : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। 
মাতার নাম         : সারদা দেবী।
পিতামহের নাম  : প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুর।
ছদ্মনাম               :  ভানুসিংহ ঠাকুর।
মৃত্যু তারিখ          : ৭ আগস্ট, ১৯৪১(২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)

(FAQ ) বা প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন

প্রশ্নঃ অপরিচিতা গল্পের কল্যাণী বিয়ে না করার কারণ কি ছিল?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'অপরিচিতা' গল্পের কল্যাণীয় বিয়ে না করার কারন- আত্মমর্যাদা। 'অপরিচিতা' উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা গল্প। "অপরিচিতা" গল্পে নারী চরিত্র- দুইটি (অনুপমের মা ও কল্যাণী)।

প্রশ্নঃ অপরিচিতা গল্পের মামার নাম কি?
উত্তরঃ কাহিনি দেখা, না-দেখায় ছবির প্রধান চরিত্র উত্তর কলকাতার এক ২৩ বছরের যুবক। তার নাম অনুপম (সমদর্শী দত্ত অভিনীত)। সে তার মা (লাবনি সরকার) ও মামার (কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে থাকে।

প্রশ্নঃ অপরিচিতা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কে?
উত্তরঃসঞ্জয় 'অপরিচিতা' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনুপমের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত বছর বয়সে ছোট গল্প লিখেছেন?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৮ মে, ১৮৬১ – ৭ আগস্ট, ১৯৪১) ৯৪টি ছোটোগল্প রচনা করেছিলেন। ১৮৭৭ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে "ভিখারিণী" গল্পটি রচনার মাধ্যমে তাঁর ছোটোগল্প রচনার সূত্রপাত ঘটে।

প্রশ্নঃ কল্যাণীর পিতার নাম কি ছিল?
উত্তরঃ কল্যাণীর পিতার নাম কী? উত্তর : কল্যাণীর পিতার নাম শম্ভুনাথ সেন।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক, আশা করা যায় আজকের এই আরটিকালের মাধ্যমে আপনি অপরিচিতা গল্পের সম্পূর্ণটাই বুঝতে পেরে গেছেন। যদি আর্টিকেলটি আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন।
নিয়মিত এরকম সঠিক এবং তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারে। প্রতিনিয়ত এইরকম ক্রিয়েটিভ বিষয় আমাদের ওয়েব সাইটে পাবলিশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১