লবণ পানি দিয়ে কুলি করার বিশেষ উপকারিতা -সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

লবণ পানি দিয়ে কুলি করলে বা গার্গল করলে ছোটখাটো অনেক অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।বর্তমানে অনেক ওষুধের ব্যবহার থাকলেও কিন্তু আদিকালে মানুষ লবণ পানি দিয়ে গার্গল বা কুলি করে অনেক উপকার পেয়েছে।গার্গল বা কুলি করার ফলে ছোটখাটো অসুখ এবং নাকের সর্দিসহ আরো বিভিন্ন উপকারিতা হয়েছে। তাহলে চলুন লবণ পানি দিয়ে গার্গল করার বিশেষ উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।

লবণ পানি দিয়ে কুলি করার বিশেষ উপকারিতা
অভিজ্ঞদের পরামর্শ মতে লবন পানিতে গার্গল করার ফলে আমাদের মুখের ভেতরের সমস্ত প্রকার জীবাণু বের হয়ে যায় এবং মুখে সংক্রামিত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমরা অনেক সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারব। যদি লবণ পানি দিয়ে গার্গল করার বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন।

নাকের সর্দি দূর করে নাক পরিষ্কার রাখে

লবণ পানি দিয়ে গার্গলিং করার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং নাকের ভেতরের আবর্জনা এবং শ্লেষ্মা অপসারণ করতে সাহায্য করে।লবণ পানি দিয়ে গার্গলিং করার ফলে নাকের ব্যথা, গলা ব্যথা,নাকের জ্বালাপোড়া,নাকের সর্দি, গলার সমস্যা থেকে মুক্তিপাওয়া যায় এবং ভাইরাস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদিকে ধ্বংস করে ফেলে।

গলার শ্লেষ্মা দূর করার ফলে নাকের জ্বালাপোড়া এবং গলা ব্যাথা থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। যার কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কোন সমস্যা হয় না। তাই নাকের সর্দি দূর করতে এবং নাক পরিষ্কার রাখতে লবণ পানি দিয়ে গার্গলিং করার কোন বিকল্প নেই। 
২০১১ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা গলা ব্যথার জন্য লবণ পানি ব্যবহার করতে বলেছেন। মূলত সর্দির কারণে হালকা গলা ব্যথা হয়ে থাকে লবণ পানি দিয়ে গার্গলিং করার মাধ্যমে সর্দিটাকে কমানো যায় এবং সহজেই গলা ব্যথা দূর করা যায়। এই কারণেই লবণ পানির গার্গলিং খুবই উপকারী।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বস্তু গ্রহণ করতে হয়। আমাদের খাওয়ার মাধ্যমে এই খাদ্যবস্তুগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের দাতের গোড়াই লেগে থাকে যার ফলে অনেক সময় আমাদের মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়। তাই আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য লবণ পানির কুলি বা গার্গল খুবই কার্যকর একটি উপায় হতে পারে। 

লবণ পানি দিয়ে কুলকুচা বা গার্গল করা ফলে আমাদের মুখে যে সমস্ত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া অ্যাটাক করে থাকে বা সংক্রমণ করে থাকে তাদের ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না এবং দুর্গন্ধ হতে বাধা দেয়। আর ব্যাকটেরিয়া না জন্মালে আমাদের মুখে দুর্গন্ধ হবে না তাই বলা যায় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করার বিশেষ উপকারিতা হয়ে যায়।

পিএইচ এর মাত্রা ঠিক রাখে এবং ভারসাম্যতা বজায় রাখে

লবণ ও পানি দুই কুলি করার ফলে আমাদের গলায় যে সকল ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় তা ধ্বংস হয়ে যায় তা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে যে সকল এসিড যে সকল এসিড তৈরি হয় সেগুলো সহজে দূর করতে সাহায্য করে।
এটি আমাদের মুখের পিএইচ এর মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আমাদের মুখে যে সকল ব্যাকটেরিয়ার জন্মায় সেগুলোকে ধ্বংস করতে বা মেরে ফেলতে সাহায্য করে। আমাদের মুখে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়া গুলো বিভিন্নভাবে আক্রমণ করে থাকে সেগুলোও রোধ করে।

টনসিলের ব্যথার চরম ঔষধ

মানব শরীর এর মধ্যে কয়েকটি টিস্যু রয়েছে।টনসিল হলো আমাদের গলার পেছনে অবস্থিত দুটি টিস্যু যা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সংগঠিত হয়ে থাকে । টনসিল দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার সময় আমাদের গলা ব্যথা করে যার ফলে আমরা খাবার খেতে পারি না। 

তাই লবণ পানি দিয়ে কুলি করার ফলে আপনাকে ব্যাথা থেকে মুক্তি দিবে এবং সহজে টন দূর করতে সাহায্য করবে। আমাদের গলা বিভিন্ন ধরনের কোষের সমন্বয়ে গঠিত। হঠাৎ করে গলা ব্যথা এবং গলার দুপাশে ফুলে ওটাকে বলা হয় টনসিল ।

যদি আপনার টনসিল হয়ে থাকে তাহলে আপনি খাবার গিলতে পারবেন না এবং খাবার গিলার সময় গলায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হবে। লবণ পানি দিয়ে কুলি করার ভালো এই ব্যাথাকে সহজেই রাস করা যায় এবং টনসিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মুখের সকল প্রকার দুর্গন্ধ দূর করে

আপনার মুখের হয়তো অনেক দুর্গন্ধ হতে পারে কোন কিছু করার ফলে বা কোন কিছু খাবার ফলে। লবণ দিয়ে কুলি বা গার্গল করার কারণে সহজে মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যায় এবং সুগন্ধ তা বজায় রাখা যায়। 
আমাদের মুখে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় যার ফলে বিভিন্ন কারণে মুখের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। লবণ পানি দিয়ে কুলি করার ফলে ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস হয়ে যায়।তাই সহজেই এই মুখের দুর্গন্ধ তা রোধ করা যায় এবং এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায় মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য।

শ্বাসনালীর বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দূর করে

আমরা সকলেই জানি ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক লবণাক্ত কোন কিছু পছন্দ করেনা তাই লবণ-পানে হতে পারে শ্বাসনালিরসংক্রমণ রোধের সবচেয়ে বড় ঔষধ। বিভিন্ন ধরনের গবেষণা জানা গেছে আমাদের প্রতিদিন অন্তত তিনবার গরম লবণ পানি দিয়ে করতে হবে যার ফলে শ্বাসনালীর সংক্রমণের ঝুঁকে অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রতিদিন গার গোলিন বা কুলি করার ফলে শ্বাসনালীতে জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং একপর্যায়ে তারা মৃত হয়ে যায়।

মুখের ঘা এবং আলসার দূর করতে সাহায্য করে

আমাদের সকলের মুখে প্রায় বিভিন্ন কারণ বশত মুখের ঘা দেখা যায়। মুখে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ হলে মূলত এই মুখের ঘা দেখা যায়। মুখের ঘা এর চেয়ে যন্ত্রণা দায়ক আর কোন কিছু হতে পারে না। যার ফলে খাবারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়, খাবার সময় মুখ জ্বালাপোড়া করে এবং সঠিকভাবে খাবার খেতে না পারলে আমাদের দেহ সঠিকভাবে কাজও করতে পারবেনা।
যার ফলে আরও বিভিন্ন ধরনের অসুখ আপনাদের শরীরে বাড়তে পারে। লবণ পানি দিয়ে কুলি করার ফলে মুখের আলসার সহজেই দূর করা যায় এবং সহজে মুখের ঘা প্রতিরোধ করা যায়। লবণ পানি দিয়ে গার্গলিং করার ফলে মুখের ঘা দূর করতে এবং দ্রুত সেরে ওঠতে সহায়তা করে। তাই আমাদের নিয়মিত লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে কুলি করতে হবে।

দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে

লবণ ও পানের মিশ্রণ দিয়ে কুলি করার ফলে আমাদের দাঁতে বিভিন্ন ধরনের লালচে ভাব এবং ময়লার স্তরন সহজে দূর হয়ে যায় এবং দাঁত পরিষ্কার এবং ঝকঝকে থাকে।

মাড়ি ও দাঁতের ব্যথা কমায় এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া দূর করে

বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ,ছত্রাক ,ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস আক্রমণের কারণে আমাদের মাড়ি এবং দাঁতে ভিন্ন প্রজাতির রোগ দেখা যায়। যেমন-মাটি থেকে রক্ত পড়া, মাড়ে ফুলে যাওয়া, দাঁতের ব্যথা, দাঁতের লালচে ভাব ইত্যাদি লবণ পানির মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে সহজে এগুলো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লবণ পানি মিশ্রণের অনেক উপকারিতা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়ার সাথে তুমুল লড়াই করে মাড়ি এবং দাঁত কে সুস্থ রাখে।

কিভাবে লবণ পানি দিয়ে গার্গল বা কুলকুচা করবেন ?

  • আধা কাপ হালকা গরম পানির সাথে এক চামচ পরিমাণ লবণ নিন। লবণ ও পানিকে ভালোভাবে মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত নাড়াতে থাকুন।
  • ভালোভাবে মিশ্রণ হয়ে যাওয়ার পর লবণ পানির মিশ্রণ থেকে একটি চুমুক নিন এবং কিছু সময় আপনার মুখে ধরে রাখুন।
  • মুখের ভেতর বিভিন্নভাবে লবণ ও পানির মিশ্রণটি নাড়াচাড়া বা কুলকুচি করতে থাকুন। কুলকুচি করা হয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর পানি গুলো ফেলে দিন মুখ থেকে।
  • উপরে দেখানোর নিয়ম অনুযায়ী দিনে তিনবার কুলকুচি করতে থাকুন।

লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আপনারা এতক্ষণে হয়তো লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি বা গার্গলিং করার বিশেষ উপায়টি জেনে গেছেন। আশা করা যায় আর্টিকেল পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো লবণ পানি দিয়ে গুলি করার ফলে আপনি ক্ষুদ্র অনেক অসুবিধ থেকে রক্ষা করেন এবং আপনার জীবনটাকে সফলভাবে চালাতে পারবেন।
সুস্থতা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। যে অসুস্থ সে জানে অসুস্থ থাকার কি যন্ত্রনা। তাই আমাদের নিয়ম মেনে এই কাজগুলো করার মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন করতে পারি। তাই প্রতিদিন নিয়ম মেনে আমরা অন্তত দিনে তিনবার লবণ পানি দিয়ে কুলি করব। 

আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধু বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এরকম সঠিক, নির্ভুল এবং আকর্ষণীয় তথ্য প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েব সাইটে পাবলিশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১