খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা - খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

আজকের এই পোস্টে খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে সম্পন্ন আলোচনা করা হয়েছেতাই। এছাড়াও আরো রয়েছে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকার করে খেজুর। ব্যবহার করে এই ফলটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা সকলের খেজুর খেয়ে থাকি কিন্তু এর উপকারিতা এবং নিয়ম জানি না। 

আপনি যদি খেজুর খাওয়ার নিয়ম এবং খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে না জানেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন। তা হলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

রোজার সময় ইফতারে সবার ঘরে এই ফল থাকে অর্থাৎ খেজুরের কথা বলছি। খেজুর খেলে তার শরীরের এনার্জীর ঘাটতি মেটাতে কাজ করে। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। যে কারণে রোজায় সকলে খেজুর খায় তার বিশেষ কারণ হলো, সারাদিন রোজা থাকার পরে আমাদের শরীরে যে ঘাটতি হয় খেজুর খেলে তার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাই মূলত রমজানের সময় আমরা সকলেই খেজুর খেয়ে থাকি। কিন্তু শুধু রমজানের সময়ই নয় এই ফল সারা বছরই আমাদের খাওয়া উচিত। কারণ এটি শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়। এছাড়াও সারাদিন আমরা অনেক কাজ করার পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। শরীরে ক্লান্তি দূর করতে কয়েকটি খেজুর অনেক উপকারী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

এই খেজুরের উপকারিতার কথা বলতে গেলে হয়তো অনেক কিছুই বলা হবে। তাহলে চলুন খেজুর খাওয়ার মূল উপকারিতা ও নিয়ম এর কথাগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকার করে এই খেজুর। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটিতে এনটিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আইরন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের সমৃদ্ধ খেজুর। তাই প্রতিদিন খেজুর খেলে শরীরে এনার্জি পরিপূর্ণ থাকবে। 

খেজুর খাওয়ার যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।তেমনি ত্বক ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে এর অনেক গুনাগুন রয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খালি পেটে খেজুর খেলে বেশ উপকার হবে বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়াও এর কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক।-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
মস্তিষ্ক সচল রাখে,ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে,গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী,হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়,ত্বককে টানটান করে এবং হার্টের সমস্যা দূর করে খুশখুসে কাশি দূর করে। এছাড়াও খেজুরের উপকারিতা গুলোর মধ্যে রয়েছে। যেমন-
  • প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম ,যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়েট রাখার জন্য এই ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ফলে রয়েছে ফাইবার
  • খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগ দূর করতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে প্রথমে খেজুর কে রাতে ভিজিয়ে রাখুন, এবং সকালে ভিজিয়ে রাখা পানি পান করুন।
  • রক্তস্বল্পতায় ভোগ আর রোগীদের জন্য খেজুর একটি উপকারী ফল। একজন সুস্থ মানুষের যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার অনেকটা আসে খেজুর থেকে।
  • খেজুরের লিউটেন ও জিক্সাথিন ঢাকায় তার রেটিনা ভালো রাখে

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়

প্রতিটি জিনিসেরই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। খেজুরের বেলায় তার ব্যতিক্রম হবে কেন? খেজুর খাওয়ার কিছু উপযুক্ত সময় রয়েছে। তবে সব সময় খেজুর খাওয়া যায়। কিন্তু যে সমস্ত সময়ে খেজুর খেলে অনেক উপকারে আসে সেগুলোর মধ্যে হল সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেজুর খাওয়া। দুপুরে খাওয়ার আগেই খেজুর খাওয়া। 
এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুর খুবই ভালো একটি কার্যকরী ফল।যখন মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করবে তখন খেজুর খেতে পারবেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খেতে পারবেন। এবং আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘি দিয়ে খেজুর খাবেন। তাহলে আপনার ওজন ধীরে ধীরে পূর্বের তুলনায় বেড়ে যাবে।

তবে প্রতিদিনই খেজুর খাওয়া যায় প্রতিদিন খেজুর খেলে শরীরে থাকবে ভরপুর এনার্জি। যার ফলে আপনি সারাদিন অনেক কাজ করার পরেও ক্লান্ত অনুভব করতে পারবেন না। এবং আপনার মন সবসময় প্রফুল্ল থাকবে। তাই আমাদের খেজুর খাওয়ার উপায় গড়ে তুলতে হবে।

১০০ গ্রাম খেজুরে মধ্যে কি কি উপাদান থাকে

  • শক্তি:১১৭৮ কিলো জুল (২৮২ kcal)
  • শর্করা-৭৫.০৩ g
  • চিনি:৬৩.৩৫ g
  • খাদ্য আঁশ:৮ g
  • স্নেহ পদার্থ:০.৩৯
  • প্রোটিন :২.৪৫
  • ভিটামিন :১০ মিলিগ্রাম
  • থায়ামিন:৫%.০.৫২
  • ভিটামিন -ই:০৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম:৪%৩৯
  • ফসফরাস:৯%৬২ মিলিগ্রাম
  • কোলেস্টেরল ও চর্বি: প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে আছে ০.৬ গ্রাম কোলেস্টেরল ও চর্বি
  • আমিষ: একটি খেজুরের ২.২ গ্রাম আমিষ আছে
  • লৌহ:খেজুরের লৌহ আছে ৭.৩ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: আছে ৬৩ মিলিগ্রাম

হাড় ভালো রাখে

প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের শক্ত হাড় গঠনের সহায়তা করে। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এর মত শক্তিশালী গণেশ খেজুরে পাওয়া যায়। সবই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। খেজুরে এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যার ফলে আমাদের হাড়ের ভেতরে ক্যালসিয়াম জোগাতে এবং হাড়ের ভঙ্গুরীতে বাধা প্রদান করতে সাহায্য করে। তাই হাড়ের সুস্থতা সুনিশ্চিত করতে চাইলে আমাদের নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ দূর করে

আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগে ভুগেন। কিন্তু কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন তার উপায় জানেন না।খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যে ও বদ হজমের সমস্যা দূর হয়।
তুলনামূলকভাবে যেসব খেজুর এ একটু শক্ত সেগুলো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে ওই পানি পান করলে অনেক অংশ কুষ্ঠকাঠিন্যের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফলে আমাদের বদ হজমে অনেকাংশ দূর হয়ে যায়।

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতাও অপকারিতা

যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য খেজুর অত্যন্ত কার্যকরী একটি খাবার। কারণ খেজুরের প্রচুর পরিমাণে ভাইব্রেট থাকে এটি ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সুযোগ দেয় না। তাই নিয়মিত ভেজানো খেজুর খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাহলে চলুন খেজুর ভিজিয়ে খাবার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ জেনে নেওয়া যায়।-
  • খেজুর ভিজিয়ে রাখলে টেনিন বা ফ্যাটিক অ্যাসিড দূর হয়, যা এর পুষ্টিকে সহজে শোষণ করতে পারে। খেজুর ভিজিয়ে রাখার ফলে ,এই ফল সহজে হজম হয়ে যায়।
  • ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খালি পেটে খেজুর খান। এতে সারাদিন সতেজ অনুভব করবেন এবং দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য খেজুর কার্যকর একটি খাবার। কারণ খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এটি ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সুযোগ দেয় না। তাই নিয়মিত খেজুর খাওয়া আমাদের সকলের উচিত
  • খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • খেজুরের গুষ্টির করে নিতে চাইলে খাওয়ার আগে সারারাত অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর খান।
  • আপনার যদি নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস না থাকে। তাহলে আজ থেকে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর ফলে পরবর্তীতে আপনি অনেক স্বস্তি এবং সুস্থতা অনুভব করবেন। যা আপনার অনেক উপকার সাধন করবে।

খেজুরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা 

মস্তিষ্ক সচল রাখে

খেজুরের এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অনেকটা উপকারী। খেজুরের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এই ফলটির মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত করে রাখে। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি এবং ভিটামিনের অভাব পূরণে ভরপুর ও সুস্বাদু এই ফলটি অনেকটাই ভূমিকা রাখতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

ওজন কমানোর জন্য খেজুর খুবই উপকারী। আমরা অনেকেই অনেক ওজনের কারণে অস্বস্তি বোধ করি। তাদের জন্য খেজুর খুবই কার্যকরী। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে এটি আমাদের খোদা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। তাই আমরা যখন নিয়ন্ত্রণ করে খাই তখন আমাদের ওজন ও নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের খেজুর খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

হিমোগ্লোবিন বাড়ায়

খেজুরে খুবই ভালো পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। আমাদের শরীরের জন্য হিমোগ্লোবিনের প্রয়োজন। এই হিমোগ্লোবিন আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে পেয়ে থাকি। এটি শরীরের রক্ত সরবরাহ করে। তাই প্রতিদিন খালি পেটে খেজুর খেলে আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী

খেজুর গর্ভবত নারীদের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভবতী নারীদের অনেক সময় রক্তের স্বল্পতা দেখা যায়। যার ফলে শিশুর এবং মায়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু খেজুর খাওয়ার ফলে এই রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের জন্য এই বহুগুনে পুষ্টি সমৃদ্ধ খেজুর খাওয়া অনেকটাই কল্যাণ জনক।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক, আপনারা হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছেন খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।খেজুর খাওয়া যেমন শান্তির জন্য ভালো তেমনি এটি চুল, ত্বক ইত্যাদিসহ আমাদের শরীরের অনেক উপকার সাধন করে। এটি খাওয়ার ফলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।বহুগুনে ভরপুর এই খেজুর আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। 
তাই আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। সব সময় নির্ভুল ও সঠিক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১