ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষিত থাকার তথ্য-ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল

 প্রিয় পাঠক, ভূমিকম্প হল এমন একটি কম্পন যার মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আজকের এই পোস্টেভূমিকম্প থেকে সুরক্ষিত থাকার তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষিত থাকার তথ্য

আমাদের অনেকের ভূমিকম্প সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। ভূমিকম্পের সময় করণীয় ও সতর্কতা আমাদের দৃঢ়ভাবে পালন করতে হবে।ভূমিকম্পের সময় কি কি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে? এই বিষয়গুলো জানা থাকলে অবশ্যই ভূমিকম্পের বিপদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই ভূমিকম্পের সময় করণীয় ও সর্তকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিস্তারিত।

ভূমিকম্প কি

ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমি কম্পন ভূ-পান্তরে যখন একটি বিশাল শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন মূলত ভূমির কম্পন শুরু হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষ এর হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন এর কারণেও ভূমিকম্পন হয়ে থাকে। যদি হঠাৎ করে ঘরের কোন জিনিস দুলতে শুরু করে অর্থাৎ দেওয়াল ঘড়ি, টাঙ্গানো ছবি, খাট সহ আসবাবপত্র ইত্যাদি।
বিভিন্ন জিনিসপত্র তাহলে বুঝে নিতে হবে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ভূমিকম্পগুলি সিসমিক তরঙ্গ তৈরি করে, যা কম্পন যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে বাস্ট বরাবর ভ্রমন করে। দুই ধরনের রয়েছে: রেডিও ওয়েব এবং সারফেস ওয়েব। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে প্রায় প্রতিবছর গড়ে ৬০০০ ভূমিকম্প হয়ে থাকে। 

এগুলো বেশির ভাগই মৃদু, যা আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে যেমন-প্রচন্ড, মাঝারি ও মৃদু ।

ভূমিকম্প কেন হয়

আমাদের ভূগর্ভ কতগুলো ভাগে বিভক্ত হয় যাদেরকে টেকনিক প্লেট বলে। এই টেকটনিক প্লেট কিন্তু স্থিতিশীল নয়, এগুলো চলমান। চলমান একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের চাপ দেওয়ার কারণে সেখানে শক্তি সঞ্চিত হয়। যখন হঠাৎ করে প্লেটগুলো সরে যায় তখন সঞ্চিত শক্তি বের হয়ে যায় এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।
শিলার পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চালন ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এই ভূত্বকের কিছু অংশ। তাকে আমরা মূলত ভূমিকম্প বলে থাকি। ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে তখন সে দেশের অবস্থানকে ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলে চাপ প্রয়োগ করে । 

সেই ফাঁকা স্থান ধসে গিয়ে ভূ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর থেকে মূলত ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে। আগ্নেয়গিরি সংগঠিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে মূলত ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

ভূমিকম্পের সময় যা যা করণীয়

ভূমিকম্পের সময় আমাদের কিছু করণীয় ও সতর্কতা গুলো মেনে চলতে হবে।ভূমিকম্প হচ্ছে এমন সময় টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা বা উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করুন।

নিচু ভবনে থাকলে বের হতে না পারলে জানালার পাশে অথবা দেওয়ালের পাশে অবস্থান না করে শব্দ কোন বিম বা টেবিলের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করুন। এছাড়াও কিছু উল্লেখযোগ্য করণীয় গুলো হল।-
  • ভূমিকম্পের সময় উঁচু ভবনে থাকলে বের হতে না পারলে উত্তেজিত হবেন না। কারণ ভূমিকম্পের সময় আপনাকে ধৈর্য ধরে পরিচিতি মোকাবেলা করতে হবে।
  • আপনার মোবাইল ফোনে ফায়ার সার্ভিস এবং দরকারি মোবাইল নাম্বার গুলো আগামী সতর্কতা হিসেবে রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগতে পারে।
  • দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
  • ভূমিকম্পের সময় অবশ্যই মাথার উপরে শক্ত করে বালি অথবা কার্ডবোর্ড এবং নরম কাপড়ের কুন্ডলী ধরে রাখুন যাতে আপনার মাথায় আঘাত না লাগে।
  • গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান করুন।
  • উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • ভূমিকম্পের সময় কোন গাড়িতে থাকলে, গাড়ি চালানো বন্ধ করুন এবং কোন খোলা জায়গায় গাড়িটি দাঁড় করান।
  • বহুতলা ভবনে একই জায়গায় একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষ আশ্রয় না নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিন।
  • বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন ।
  • একবার ভূমিকম্প হওয়ার পরে আপনি কখনোই নিজেকে বিপদমুক্ত মনে করবেন না কারণ ভূমিকম্প হওয়ার পরও ছোট একটা ভূমিকম্প হয়।
  • রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে নিন
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান করলে স্কুল ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত ব্রঞ্চের নিচে অথবা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
  • ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলা আছে আশ্রয় নিন।
  • ভাঙা দেওয়ালের নিচে থাকলে চাপা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি তাই ভাঙ্গা দেওয়ার থেকে দূরে থাকুন।
  • কোন ভবনে থাকলে কম্পন বা ঝাকুনি থামার পর দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন।

ভূমিকম্পের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

  • ভূমিকম্প শেষ হলেও আরো কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বড় ভূমিকম্পের পরেও আরো ছোট ছোট কিছু ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে সুবিধাটাও ফিউজ বন্ধ করে দিন।
  • ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে অবস্থা স্বাভাবিক হলে সেগুলো ঠিকঠাক করে নিতে হবে।
  • গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ থাকলে দ্রুত জানালা দরজা খুলে দিন এবং বাইরে বেরিয়ে যান। এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।
  • এছাড়াও বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে তার জন্য আগে থেকেই ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার সংগ্রহ করে রাখুন।

ভূমিকম্পের প্রকারভেদ

ভূতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, ভূমিকম্প প্রধানত চার ধরনের। নিজে তার বিস্তারিত দেয়া হলো।-
টেকটোনিক ভূমিকম্প:
থিবীর প্লেট নড়াচড়া করলে টেকটোনিক ভূমিকম্প হয়। এটি ঘটতে পারে যখন দুটি প্লেটের সংঘর্ষ হয়, যখন একটি প্লেট আরেকটির নিচে চলে যায়, অথবা যখন একটি প্লেটকে আবরণের নড়াচড়ার কারণে নড়াচড়া করতে বাধ্য করা হয়

আগ্নেয়গিরির ভূমিকম্প:

আগ্নেয়গিরির ভূমিকম্প ঘটে যখন ম্যাগমা পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে চলে যায়। এটি ঘটতে পারে যখন ম্যাগমা পৃথিবীর প্লেটগুলির নড়াচড়ার দ্বারা বাধ্য হয়, বা যখন এটি একটি আগ্নেয়গিরি থেকে মুক্তি পায়।
ভূমিকম্প ধসে বা পতন:
ভবন বা অন্যান্য স্থাপনা ধসে পড়লে ভূমিকম্প হয়। এটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল নির্মাণ, তীব্র আবহাওয়া বা ভূমিকম্প।

বিস্ফোরণ ভূমিকম্প:

বিস্ফোরণ ভূমিকম্প বিস্ফোরক বিস্ফোরণ দ্বারা সৃষ্ট হয়. এটি খনি, নির্মাণ বা যুদ্ধ সহ বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয়

ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার উপর শক্ত বালিশ অথবা অন্য কোন সত্য বস্তু দিয়ে মাথার উপরে ভালোভাবে ধরে রাখা। যাতে আমাদের মাথার কোন আঘাত না লাগে। আপনার বাড়ির ভূমিকম্পের স্থিতিস্থাপকতা মূল্যায়ন করুন, এবং আসবাবপত্র বেধে দেওয়া।
কাচের জানালায় এন্টি সরকারের লেপে লাগানোর মতো ধাপগুলোর মাধ্যমে একটি উন্নত করুন। ফ্ল্যাশলাইট এবং রেডিয়ার ব্যবস্থা করে রাখুন। ভূমিকম্পের সময় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভূমিকম্প মোকাবেলা করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

ভূমিকম্প জনিত দুর্যোগ মোকাবেলার কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে পদচারী-সেতু, উড়াল সেতু বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামানো। ব্যাটারি রেডিও টর্চ লাইট এবং পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়িতে সব সময় রাখা।

বাংলাদেশের ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা

উচ্চ ভূমিকম্প প্রবণ:

বাংলাদেশের মানচিত্রে উচ্চ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার গুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেট ,চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর নরসিংদী জেলার অংশ বিশেষ। এ অঞ্চল ডাউকি লাইনে থাকার কারণে উচ্চমাত্রা ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

মাঝারি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা: 

ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অংশবিশেষ।

শেষ কথা: ভূমিকম্পের সময় প্রয়োজনে পদক্ষেপ


ভূমিকম্প হলো এমন একটি দুর্যোগ যা খুবই অল্প সময়ে আমাদের অনেক ক্ষতি করে দেয়। এই সময় সবসময় আমাদের শান্তভাবে চিন্তা করতে হবে। ভূমিকম্পের সময় কোনরূপ তাড়াহুড়া করা যাবে না তাড়াহুড়া করলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিতে ভুল হতে পারে।
কথায় আছে একটি দুর্ঘটনা,সারা জীবনের কান্না। যার ফলে আমাদের সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। সম্মানিত পাঠক, আমি আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ভূমিকম্পের সময় করণীয় ও সর্তকতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়ে গেছেন। 

আপনি যদি প্রতিদিন এরকম সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১