কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত-কুসুম্বা মসজিদ
আপনি কি ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
চাচ্ছেন? কুসুম্বা মসজিদ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মসজিদ। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ইতিহাসবিদদের মতে কুসুমা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য কলার একটি অনুপম নিদর্শন। এটি
অনেক যুগ পুরনো একটি আদিম নিদর্শন। যদি ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে চান এবং এবং কুসুমা মসজিদ কোথায় অবস্থিত এছাড়াও আরো অন্যান্য
বিষয় নিয়ে আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে ।
কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত
কুসুম্বা মসজিদ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের একটি
প্রাচীন মসজিদ। কুসুম্বা দিঘির পশ্চিম পাড়ে, পাথরের তৈরি ধূসর বর্ণের মসজিদটি
অবস্থিত।আত্রাই নদীর পশ্চিম তীরে, বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা থেকে ৪
মাইল উত্তর-পশ্চিমে মান্দা-নওগাঁ সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে এ মসজিদটি অবস্থিত। এই
মসজিদ অত্যন্ত সুন্দর এবং ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি জায়গা।
কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে রাজশাহী জেলা পরিষদের ওভারশিয়ার সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী
কুসুম্বা গ্রামের প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন।
শিলালিপিটি বর্তমানে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে রয়েছে। যে কেউ জাদুঘরে
গেলে শিলালিপিটি দেখতে পারবেন। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দেয়াল থেকে সামান্য
অবিক্ষিপ্ত।
আরো পড়ুনঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
মসজিদের অভ্যন্তরভাগের পশ্চিম দেয়ালে (কিবলামুখী দেয়ালে) দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এবং
মাঝের প্রবেশপথ বরাবর মেঝের সমান্তরালে দু’টি মিহরাব আছে। তবে উত্তর-পশ্চিম কোণে
থাকা মিহরাবটি একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মের মধ্যে স্থাপিত। পূর্বদিকে স্থাপিত একটি
সিঁড়ি দিয়ে এ প্ল্যাটফর্মে ওঠা যায়।মিহরাবগুলো খোদাই করা পাথরের নকশা দিয়ে
ব্যাপকভাবে অলংকৃত।
কারুকার্য খচিত পাথরের তৈরি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত এ খিলানগুলোর শীর্ষে রয়েছে কলস
মোটিফের অলংকরণ। স্তম্ভগুলোর গায়ে রয়েছে ঝুলন্ত শিকল ঘণ্টার নকশা। মিহরাবের
ফ্রেমে রয়েছে প্রায় সর্পিল আকারে খোদিত আঙুরগুচ্ছ ও লতার নকশা। এছাড়া প্রায়
বিন্দুর আকার ধারণকারী কলস, বৃক্ষলতা ও গোলাপ নকশা রয়েছে গা ঘেঁষে।
প্ল্যাটফর্মের প্রান্তেও রয়েছে আঙুরলতার অলংকরণ। আর এ প্ল্যাটফর্মের ভারবহনকারী
খিলানের স্প্যান্ড্রিল ও মসজিদের কিবলা দেয়ালজুড়ে রয়েছে গোলাপ নকশা। বাইরের
দেয়ালে আস্তরণ হিসেবে ব্যবহৃত পাথরগুলো অমসৃণ। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে
মসজিদের নির্মাণকাল লেখা রয়েছে হিজরি ৯৬৬ সাল(১৫৫৮-১৫৬৯ খ্রিষ্টাব্দ)।
আরো পড়ুনঃ
মুখে ব্রণ ও কালো দাগ দূর করুন সহজেই
আফগানি শাসনামলের শুর বংশের শেষদিকের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে
সুলায়মান নামে একজন এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদের
তিনটি গুম্বজ নষ্ট হয়েছিল। পরে সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কার
করেন।পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মসজিদের চতুর্দিকে এবং পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত দিঘির
পাড়ে ফুলের বাগান নির্মান, আলোকসজ্জার কাজ করা হয়।
কুসুম্বা মসজিদ স্থাপত্য
ইতিহাসবিদদের মতে, কুসুম্বা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন। সবর খান
বা সোলায়মান নামে ধর্মান্তরিত এক মুসলিম এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মূল প্রবেশপথে
শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় এ মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি বা ১৫৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দে শের
শাহ'র বংশধর আফগান সুলতান প্রথম গিয়াস উদ্দিন বাহাদুরের শাসনামলে (১৫৫৪-১৫৬০)
নির্মিত।
কুসুম্বা মসজিদ কোন রাজত্বকালে নির্মিত হয়
বাংলায় আফগানদের শাসন আমলে শূর বংশের শেষদিকের শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহর
রাজত্বকালে জনৈক সুলাইমান মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
ছিলেন। এ মসজিদের নির্মাণকাল ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দ)।
ইতিহাসবিদদের মতে, কুসুম্বা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন।যদিও
মসজিদটিতে অনেক স্থাপত্য পরিবর্তন হয়েছে, ভবনটি মূলত একটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে
রয়ে গেছে, সাধারণত ছাদবিশিষ্ট, এতে একটি মিহরাব এবং একটি মিম্বার থাকে, যার সাথে
মাঝে মাঝে একটি মিনার সংযুক্ত থাকে।
আরো পড়ুনঃ
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কুসুম্বা মসজিদটি গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ নামে শেষ সুরি শাসকদের একজনের অধীনে
নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির প্রকৃত নির্মাণ কাজ সুলাইমান নামে একজন উচ্চপদস্থ
কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ছিল।
কুসুম্বা মসজিদ কত টাকার নোটে
কুসুম্বা মসজিদ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের একটি
প্রাচীন মসজিদ। কুসুম্বা দিঘির পশ্চিম পাড়ে, পাথরের তৈরি ধূসর বর্ণের মসজিদটি
অবস্থিত। বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে এই মসজিদের ছবি দেওয়া আছে।
কুসুম্বা মসজিদের অপর নাম কি?
স্থানীয়দের কাছে এর আরেক নাম কালাপাহাড়। কুসুম্বা মসজিদকে তাই নওগাঁ জেলার
ইতিহাস ও মুসলিম ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নিদর্শন বলা হয়। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দিকে
রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দিঘি। গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের খাবার পানি,
গোসল ও অজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ দিঘিটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
কুসুম্বা মসজিদ দিঘি
কুসুম্বা মসজিদকে তাই নওগাঁ জেলার ইতিহাস ও মুসলিম ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নিদর্শন বলা
হয়। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট একটি বিশাল দিঘি।
গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল ও অজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ দিঘিটি
নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পাড়েই তৈরি করা হয়েছে কুসুম্বা মসজিদ।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক , আপনি যদি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কুসুম্বা মসজিদে যান তাহলে ওইখানে
রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন
ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত এবং এটি কোথায় অবস্থিত।
আরো পড়ুনঃ
সালাতুল হাজতের নামাজ পড়ার নিয়ম
তাই বলতে পারি,আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধু
বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url