ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ -ধূমপান ছাড়ার উপায়

আমরা সকলে জানি ধূমপান একটি খারাপ অভ্যাস। তাই ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ গুলো সম্পর্কে আজকে মূল আলোচ্য বিষয়। এছাড়াও ধূমপান ছাড়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি এই সকল বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ

সাধারণ যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলা গেলেও মূলত তামাকজাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ধূমপান আমাদের সামাজিক এবং আর্থিক উভয় দিক থেকে ক্ষতি করা যাবে। তাই এর থেকে পরিত্রাণের জন্য অনেক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলুনধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়

ধূমপানের নেশা থেকে মুক্তি পেতে অথবা ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।আদা, আমলকীর গুঁড়া, লেবু, ব্ল্যাক সল্ট ও মধু মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে একটি ট্রেতে ট্যাবলেটের আকারে সাজান।
ট্যাবলেটগুলো রোদে শুকিয়ে একটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর এটি খেলে ধূমপানের তাড়না নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি আমাদের অনেক নেশা জাগিয়ে ফেলে।ধূমপানের নেশা থেকে মুক্তি পেতে আদা, আমলকীর গুঁড়া, লেবু, ব্ল্যাক সল্ট ও মধু মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে একটি ট্রেতে ট্যাবলেটের আকারে সাজান। 

এই ট্যাবলেটগুলো রোদে শুকিয়ে একটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর এটি খেলে ধূমপানের তাড়না নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাহলে ধূমপান ছাড়ার আরো কিছু বিস্তারিত নিয়ম।-
  • আপনার চারপাশের মানুষেরও ক্ষতি হচ্ছে ধূমপান যিনি করেন, তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থেকে যায়।
  • জীবনযাপনে বদল আনুন গবেষণা বলছে, আমিষ এবং মাংসজাতীয় খাবার খাওয়ার পরই মূলত ধূমপান বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
  • মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন
  • পছন্দের চকলেট খেতে পারেন
  • প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ধূমপান ত্যাগের নয় মাসের মধ্যে সিলিয়া স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলোও কম হয়। ধূমপানমুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস, মুখ এবং গলার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে।
সাবক্লিনিকাল এথেরোস্ক্লেরোসিসের বিকাশ হ্রাস করে এবং সময়ের সাথে সাথে এর অগ্রগতি ধীর করে দেয়।ধূমপান ছাড়ার ফলে সবসময় আমাদের শরীর পাক পবিত্র থাকে। যা ইসলামের জন্য খুবই ভালো।করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং বন্ধ হওয়ার 1-2 বছর পরে দ্রুত হ্রাস পায় এবং তারপর দীর্ঘ মেয়াদে আরও ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।

সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন থেকে বের হওয়া যে বিষাক্ত গ্যাস শরীর গ্রহণ করেছিলো, তা ১২ ঘণ্টা পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে কারণ ধূমপান করার সময় রক্তে অক্সিজেন যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই ধূমপান ছাড়ার ফলে আমাদের শরীরে অনেক উপকার সাধন হবে। তাই আমাদের সকলের উচিত ধূমপান এড়িয়ে চলা।

ধূমপান ছাড়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

তখন মাথাব্যথা, বমিভাব, প্রচণ্ড ক্ষুধা পাওয়া, হতাশা বা আতঙ্কভাব হয়ে থাকে। ধূমপান বাদ দেওয়ার কয়েকমাস পরই দেখা যায় শরীরে রক্তচলাচল অনেক ভালোভাবে হচ্ছে। আর আগের তুলনায় ফুসফুস শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে এবং কাশিভাবও কমতে শুরু করে। 

ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার এক বছর পর থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।আমাদের ধূমপান ছাড়ার কথা মনে আসলেই, মনে হয়ে যায় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা।যদিও প্রত্যাহার করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, আপনি যদি উপসর্গগুলিকে দেখেন যে আপনার শরীর ধূমপানের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে সেরে উঠছে। 
অনেকে দেখতে পান যে প্রত্যাহারের লক্ষণগুলি দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়, যদিও কিছু লোকের জন্য এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।ধূমপান ছাড়ার 1 দিনের মধ্যে, একজন ব্যক্তির রক্তচাপ কমতে শুরু করে, ধূমপান-প্ররোচিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। 

এই অল্প সময়ের মধ্যে, একজন ব্যক্তির অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে, শারীরিক কার্যকলাপ এবং ব্যায়াম করা সহজ হবে, হার্ট-স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের প্রচার করবে। তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোকে কাটিয়ে আমাদের ধূমপান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ধূমপান নিয়ে হাদিস

  • এটি বিভিন্ন রোগের কারণ ও স্বাস্থের জন্য ক্ষতি কারক। নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হারাম।(বাকারা:১৯৫)
  • এটি মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ। আর আত্মহত্যা করা হারাম। (নিসা: ২৯)
  • এর মাধ্যমে ধুমপায়ী নিজের যেমন ক্ষতি করে অন্যের ক্ষতি করে।ইসলামে নিজের বা অন্যের ক্ষতি করা হারাম।(মুয়াত্তা মালিক)
  • এটি দূর্গন্ধময়। যা অন্যের কষ্টের কারণ। কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয়া হারাম। (সূরা আহযাব: ৯৮) ৩) অর্থ অপচয়। “অর্থ অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা ইসরা: ২৭)
  • এটি একটি নাপাক বস্তু।আল্লাহ তায়ালা নাপাক জিনিস ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। (আরাফ: ১৫৭)
  • এটি একটি প্রকাশ্য পাপ।আর প্রকাশ্যে পাপাচার করার শাস্তি আরও বেশী।আল্লাহ নির্দেশের বিরোধিতা। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ও হালাল জিনিস ভক্ষণ করতে আদেশ করেছেন। (সূরা বাকারা:১৭২)
  • তামাক নেশা দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। কম হোক বা বেশী হোক সকল প্রকার নেশা দ্রব্য ইসলামে হারাম। (তিরমিযী,আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ) গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী

ধূমপানের কারণে কি কি সমস্যা হয়?

তামাক গ্রহণের ফলে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব, অন্ধত্ব, টিবি, ওরাল ক্যাভিটির মতো রোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান আমাদের শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপানের ফলে শরীরের প্রায় যেকোনো জায়গায় ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
তামাক গ্রহণের ফলে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব, অন্ধত্ব, টিবি, ওরাল ক্যাভিটির মতো রোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান আমাদের শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপানের ফলে শরীরের প্রায় যেকোনো জায়গায় ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

তামাক বা ধুমপান ছাড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • সারাদিনে অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খান।তাতে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
  • ফল, শাকসবজি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার ডায়েটে রাখুন।
  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর 'শুধু একটা টান' বলে কিছু হয় না। এর পরিবর্তে ফলের রসে চুমুক দিন বা ভালো কিছু খান।
  • আপনার শেষ সিগারেট জ্বালানোর আগে একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন।
  • মনে মনে সংকল্প করুন যে উচ্চ, নিচু যাই হোক না কেন, আপনি কখনই তামাকের আরেকটি কাঠিতেও আগুন ধরাবেন না।
  • এই ধরণের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাকে শক্তি জোগাবে এবং এই অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করবে।

ধূমপান ছাড়ার ওষুধ

ওষুধের চিকিৎসা (নিকোটিন প্রতিস্থাপন, ভেরেনিক্লিন বা বুপ্রোপিয়ন) ছাড়ার হার উন্নত করে, বিশেষ করে যখন কাউন্সেলিং এর সাথে যুক্ত হয়। এই ওষুধগুলি আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাহারের লক্ষণ এবং অন্যান্য ধূমপান-সম্পর্কিত নেতিবাচক প্রভাবগুলিতে সহায়তা করতে পারে।

নিকোটিন প্যাচ/গাম/গাম-বান্ধনী: এই প্রকার ঔষধ ছাড়াতে ধূমপানের ইচ্ছা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এটি নিকোটিন সরবরাহ করে এবং ধূমপান ছাড়াতে সহায়তা করার জন্য তমাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
উএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা অনুমোদিত দুটি ধূমপান ছাড়ার ওষুধ রয়েছে যা বড়ি: বুপ্রোপিয়ন এবং ভেরেনিক্লিন । বুপ্রোপিয়নের মস্তিষ্কে অনেক প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে লোকেদের ধূমপান ত্যাগ করতে সহায়তা করা। এটি তৃষ্ণা এবং অন্যান্য নিকোটিন প্রত্যাহারের লক্ষণগুলি হ্রাস করে।

লেখক এর মন্তব্য: ধূমপান ছাড়ার গুরুত্বপূর্ণ কথা

ধূমপান হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোঁয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। সাধারণ যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলা গেলেও মূলত তামাকজাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 
এই ধূমপান বর্তমানে আমাদের যুব সমাজটাকে ধ্বংস করে ফেলছে। এইভাবে আমরা ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারি।এই ধূমপানের ফলে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ মৃত্যু বলে ঢলে পড়তে। তাই আমাদের এই ধূমপান করা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্মানিত পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধু-বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে দিন। যাতে তারা এই সম্পর্কে জানতে পারে । সঠিক খবর জানতে, প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১