হাজরে আসওয়াদ এর ইতিহাস - হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি

‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর একটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন এবং হাজরে আসওয়াদ পাথরের ইতিহাস অত্যন্ত ব্যাপক। আমরা অনেকেই এই হাযরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব কি? তাই আজকের এই পোস্টে আজরে আসওয়াদ পাথরের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব।

হাজরে আসওয়াদ এর ইতিহাস

আসওয়াদ একটি পুরুষ আরবি প্রদত্ত নাম যার অর্থ "কালো" (কালো বর্ণের লোকেদের জন্যও ব্যবহৃত)। কাজরে আসওয়াদ পাথর অত্যন্ত মূল্যবান একটি নিদর্শন। এই পাথরের অনেক রহস্য রয়েছে। আমরা অনেকেই এ পাথর সম্পর্কে জানি না। 

তাই আজকের এই পোস্টটিতে হাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন পোস্টে পড়ুন।

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে ঘটনা

হাযরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের না জানলেও এর ধারনা সকলের আছে।ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সময়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। 
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় যে, স্বর্গীয় পাথরটি মহান ফেরেশতা জিবরীল (আ.) কর্তৃক হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল।

উল্লিখিত হাদিসটি প্রমাণ করে যে, হাজরে আসওয়াদ যখন বেহেশত থেকে আনা হয়েছিল তখন এটি ছিল মূলত বিশুদ্ধ সাদা রঙের এবং মানবজাতির পাপের কারণে তা কালো হয়ে গেছে।হাজরে আসওয়াদ'—কাবাঘরের দেয়ালে বিশেষভাবে স্থাপনকৃত একটি পাথরের নাম। আরবি 'হাজর' শব্দের অর্থ পাথর আর 'আসওয়াদ' শব্দের অর্থ কালো। 

অর্থাৎ কালো পাথর। 'হাজরে আসওয়াদ' বেহেশতের মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথর।এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি আট টুকরো। আগে হাজরে আসওয়াদ ছিল আস্ত একটি পাথর।হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। 
আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান। হাজরে আসওয়াদ নিয়ে অনেক ঘটনা যেগুলো শেষ করা যাবে না।

হাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব কি

মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর আদম ও হাওয়ার সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে। হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়ার জন্য হাজিদের ভিড়। ভিড়ের কারণে চুমু দেয়া সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়। প্রাক ইসলামি পৌত্তলিক সমাজেও এই পাথরকে সম্মান করা হত। হাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হাজরে আসওয়াদ এর ইতিহাস

ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুল মুহাম্মদ(সাঃ) ৬০৫ সালে এটি কাবার দেয়ালে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি রূপার ফ্রেমে আটকানো অবস্থায় কাবার সাথে সংযুক্ত রয়েছে।পবিত্র কাবা মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি ও ইবাদতের প্রধান কেন্দ্র। এই ঘরের দেয়ালে বিশেষভাবে স্থাপন করা মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথরের নাম 'হাজরে আসওয়াদ'। 

আরবি 'হাজর' শব্দের অর্থ পাথর আর 'আসওয়াদ' শব্দের অর্থ কালো। এর রং গাঢ় কালো এবং লক্ষাধিক হাজির স্পর্শের কারণে এটি মসৃণ আকার লাভ করেছে। এটি আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) এর সময় বেহেশত থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে।জান্নাতি এই পাথরটি পৃথিবীতে কিভাবে এলো- এবংহাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস অনেকেরই অজানা। 
এ বিষয়ে তাফসিরে মাযহারীতে বর্ণিত হয়েছে, আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে চলে আসার পর আল্লাহ তায়ালা ইয়াকুত মর্মর নির্মিত এবং পূর্ব ও পশ্চিমমুখী জমরূদ নির্মিত দরজাবিশিষ্ট বায়তুল মামুরকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনলেন এবং বর্তমানে কাবাঘর যেখানে অবস্থিত তার জায়গায় তা স্থাপন করলেন। 

এরপর হজরত আদম আল্লাইহিস সাল্লামকে বললেন, তুমি জান্নাতে যেভাবে এই ঘর তাওয়াফ করতে এবং এই ঘরকে ঘিরে নামাজ আদায় করতে এখানেও সেভাবে নামাজ পড়ো, তাওয়াফ করো। এসময় বায়তুল মামুরের সঙ্গে হাজরে আসওয়াদকেও পৃথিবীতে নামিয়ে আনা হয়। তাই বলা যায়হাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস অত্যন্ত ব্যাপক।

হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি

অনেকেই হয়ত এটি জানেন না যে, মক্কা থেকে হাজরে আসওয়াদ পাথরটি চুরি করা হয়েছিল এবং দীর্ঘ ২৩ বছর পর পাথরটি আবার কাবা শরীফে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়! ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কারমাতিয়ানরা এটি চুরি করেছিল। কারমাতিয়ান নেতা আবু তাহির আল-কারমতি পাথরটি চুরি করে সেখান থেকে হাজারবেসে (বর্তমানে, বাহরাইন) নিয়ে গেছিল।
আবু তাহির আল-কারমতি প্রাচীন বাহরাইনের কারমতি রাজ্যের শাসক ছিল। তার ভাই আবু সা’দ হাসান ইবনে বাহরাম ছিল আল-জান্নাবী ছিল কারমাতিয়ান রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তার মৃত্যুর পর আবু তাহির আল-কারমতি ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কারমাতিয়ানদের নেতা নির্বাচিত হয়।তাঁর শাসনামলে রাজ্যের কিছুটা বিস্তৃতি ঘটেছিল। 

সে ৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বসরায় এবং ৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে কুফায় দখলদারিত্বের জন্য অভিযান চালিয়েছিল। সে বাগদাদ দখলের জন্যও হুমকি দিয়েছিল এবং ইরাকের বেশিরভাগ অঞ্চল সে দখল করে নিয়েছিল। তৎকালীন জামানায় তাকে কেউ শান্তিপূর্ণ নেতা হিসাবে বিবেচনা করেনি।হাজরে আসওয়াদ পাথরের গুরুত্ব ইতিহাস অত্যন্ত ব্যাপক।

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে কেন চুম্বন করা হয়

আরবি 'হাজর' শব্দের অর্থ পাথর আর 'আসওয়াদ' শব্দের অর্থ কালো। অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ অর্থ হলো কালো পাথর। 'হাজরে আসওয়াদ' বেহেশতের মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথর। হাজিরা হজ করতে গিয়ে এতে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুম্বন দিয়ে থাকেন।হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণপ্রস্তরখানি ইসলামের পবিত্র বস্তু। 
হাদীসে বর্ণিত আছে, এ পাথরটি জান্নাত হতে আগত। আরো বর্ণিত আছে, এটি কিয়ামতের দিন তাকে স্পর্শকারী বা চুম্বনকারীর পক্ষে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।জরে আসওয়াদে চুমু দেয়ার জন্য হাজিদের ভিড়। ভিড়ের কারণে চুমু দেয়া সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়। প্রাক ইসলামি পৌত্তলিক সমাজেও এই পাথরকে সম্মান করা হত।

লেখক এর মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক, হাজরে আসওয়াদ পাথর অত্যন্ত মহিমান্বিত মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে একটি পাথর। এর গুরুত্ব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই পাথরের চুম্বন করে থাকলে আল্লাহ তা'আলা জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। 

যেহেতু এই পাথর জান্নাত থেকে আগত সে হত কেয়ামতের দিন এই পাথর চুম্বনকারীর জন্য সুপারিশ করবেন। হাজরে আসওয়াদ  পাথরের গুরুত্ব ও ইতিহাস সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না।

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে, বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন। প্রতিনিয়ত এরকম নির্ভুল এবং সঠিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১