কোমর ব্যথা দূর করার উপায়-কোমর ব্যথা কেন হয়?
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটিতে কোমর ব্যথা দূর করার উপায় সম্পর্কে এবং কি কি কারনে কোমরে ব্যথা হয় এছাড়াও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় গুলো কি কি সে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কোমর ব্যথা নেই এমন কোন মানুষ বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যায় না। সকলের কোন না কোন
কারণে বর্তমান যুগে কোন ব্যথায় ভোগে থাকেন। কোমরের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে
আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মাজার ব্যথার কারণ
মাজার ব্যথা এমন এক ব্যথা যা সহজে মুক্তি দিতে চায় না। উঠতে, বসতে, ঘুমাতে গেলেও
জানান এই ব্যথা সব সময় কষ্ট দিয়ে থাকেন । সারাক্ষণ বসে বসে কাজ কোমর ব্যথার
অন্যতম কারণ। কোন কাজ নিয়ে অথবা একটানা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা এবং
অফিসের মধ্যে বসে থাকা তাদের কারণে মূলত কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।
তবে মাজার ব্যথার একটা নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে এছাড়াও 40 বছর হলে কোমর ব্যথার
উপদ্রব দেখা যায়। তবে কোমর ব্যথা স্বল্পমেয়াদি অর্থাৎ এক মাসের কম সময় থাকে
এবং দীর্ঘমেয়াদি গুলো এর বেশিও থাকতে পারে। তার জন্য আমাদের উপযুক্ত চিকিৎসা
গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলুন কোমর ব্যথার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।-
- পিএলআইডি : এটিও শক্তিশালী একটি কারণ। এটি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এ ডিস্ক যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুমূলের ওপরে চাপ ফেলে। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- বাড়িতে চেয়ার টেবিলে ঠিকমত না বসে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরের ব্যাথা হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ সময় ড্রাইভিং করলে বা অনেকক্ষণ ধরে কোন গাড়ি চালালে কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে ।
- আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদন্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং মেরুদন্ড হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং কোমরে ব্যথা শুরু হয়।
- সবসময় শুয়ে বা কাজ হয়ে বই পড়ে বা অন্য যেকোনো কাজ করে তাদের মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
- বড় কোন আঘাতের ইতিহাস থাকলে কোমরের ব্যথা হতে পারে এবং এছাড়াও যদি রোগীর অন্য কোন রোগ থেকে থাকে তাহলে তার মধ্যে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
- মেরুদন্ডের টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরের ব্যথা হতে পারে
- মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশী দুর্বল হয়ে গেলে কোমরে ব্যথা হয়।
- শরীরের ওজন বেড়ে গেলে কোমরের ব্যথা হয়।
মাজার ব্যথার লক্ষণ
বর্তমানে প্রায় শত করা ৭০ জন লোক কোমর ব্যথায় ভুগে থাকে। কোমর ব্যথার বিভিন্ন
লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় যেমন।-কোমরের পেছন দিয়ে , উরুর পেছন দিয়ে,পায়ের বুড়ো
আঙ্গুল বা ছোট আঙ্গুলে চলে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার
কারণে আপনার খারাপ লাগা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় ব্যথা পা এবং হাঁটুতে ছড়িয়ে
পড়তে পারে।
উঠতে, বসতে ,ঘুমাতে যাওয়ার সময় কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।পা ফেলে হাঁটতে
কষ্ট হয়।কোমর থেকে পা এক পাশে সরাতে কষ্ট হয়।পা সোজা করে ওপরে ওঠাতে কষ্ট হতে
পারে।কোমরের জয়েন্টে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে কোনো এক পর্যায়ে কোমর সোজা করে
দাঁড়াতে, এমনকি যেকোনো পাশ ফিরতেও অত্যন্ত ব্যথা হয়।
আরো পড়ুনঃ
হার্ট এটাকের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী
হাঁটতেই পারে না।ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ে ঝিনঝিন ধরে
থাকে।সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে।পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের
শক্তি কমে যায়।মাংসপেশি মাঝে মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়।
মাজার ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
কোমর ব্যথা ঘরোয়া চিকিৎসাতেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। ব্যথা কমানোর
ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে রয়েছে—
শরীরচর্চা: কোমরের ব্যথা কমে যাওয়ার কিছুদিন পরে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম শুরু করতে হবে।
যেমন -হাটা, যোগব্যায়াম বা ইয়োগা ,সাঁতার কাটা, বাইসাইকেল রাইডিং ইত্যাদি
ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে করে পেট, পিঠ ও কোমরের পেশি শক্ত হয় এবং রক্ত
সঞ্চালন বাড়ে। হলে কোমরে ব্যথা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
ম্যাসাজ ও মালিশ: কোমরের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাথা শুরু হতে পারে ব্যথার স্থানে হালকা ম্যাসাজ
অর্থাৎ হালকাভাবে মালিশ করলে আরাম হতে পারে। এর ফলে অনেকটাই কোমরে ব্যথা কমিয়ে
তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন জোরে জোরে মালিশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
দৈনন্দিন কাজ: আমাদের দৈনন্দিন কাজ করতেই হয়। তাই দুই–তিন দিন বিশ্রাম নেওয়ার পরে
দৈনন্দিন কাজে ফিরে যেতে হবে। এতে ব্যথা দ্রুত সেরে ওঠে। এবং আমাদের জন্য
কল্যাণকর হবে।
সেক দিন : কোমরের যে জায়গায় ব্যথা হয় সেখানে সেক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া
যায় । তবে অবশ্যই ঠান্ডা সেক দেওয়ার থেকে গরম সেক দেওয়া উত্তম। তবে এই ব্যাপারে
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে শেখ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
হলুদ : দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটা কম হয়।
লেবুর শরবত : লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই
উপকারী। লেবুর শরবত দিয়ে সহজেই এবং কম সময়ে কোমরে ব্যথা দূর করা সম্ভব।
এ্যালোভেরা : প্রতিদিন নিয়ম করে এ্যালোভেরা শরবত খেলে ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।
তেল ব্যবহার :এক বালতি সামান্য গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
মিশিয়ে নিন। তারপর ওই পানি দিয়ে গোসল করুন। এটি পিঠের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি
স্নায়ু শান্ত করতেও সহায়তা করে।
রসুন ব্যবহার : কিছুটা রসুনের পেস্ট নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোমরে মালিশ করুন। এরপর ওই
স্থানটি সামান্য গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া, ৩-৪ কোয়া রসুনের
সেবনও খুব কার্যকরী।
এছাড়া একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে জায়গা ছেড়ে একটু হাঁটুন।
ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। দিনে যত বেশি হাঁটবেন, তত দীর্ঘদিন
শরীরের অবস্থা ভাল থাকবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করবেন না।
মাজার ব্যথার সময় আর যা হয়
- প্রথমেদিকে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না।
- ব্যথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ে ঝিনঝিন ধরে যায় ।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়।
- পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের শক্তি কিছুটা কমে যায়।
- মাংসপেশি মাঝে মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়।
লেখক এর মন্তব্য বা সর্বশেষ কথা
প্রিয় পাঠক,উক্ত আর্টিকেলটিতে আমরা মাজার ব্যথা দূর করার উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার মনে আর মাজার ব্যাথার সম্পর্কিত
কোনো ভুল ধারণা থাকবে না। কোমর ব্যথায় একটি মারাত্মক। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতেই
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনি এই রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে
যাবেন।
আরো পড়ুনঃ
মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করুন সহজে
যদি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে যায় তাহলে অবশ্যই আমাদের
ওয়েবসাইট কে প্রতিনিয়ত ভিজিট করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এইরকম
সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পরিবেশন করা হয়। তাই অবশ্যই বন্ধু- বান্ধবের মাঝে শেয়ার
করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url