বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি | বেগুন গাছের ভিটামিন
প্রিয় পাঠক, আপনার অনেকেই বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান? আপনি যদি বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটা আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও বেগুন গাছের ভিটামিন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
বাড়ির ছাদে বেগুন চাষ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ বা নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। তবে
সহজেই বাড়ি ছাদে বেগুন চাষ করা যায়। বাঙালিরা বেগুন বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকেন
যেমন মুড়ি দিয়ে বেগুন, খিচুড়ি বা লুসের সাথে গরম গরম বেগুন, বেগুনি করে
ইত্যাদি ভাবে খেয়ে থাকেন।আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা বাড়ি ছাদে বেগুন চাষ
করতে চায়। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা | বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি
যেহেতু আমরা বাঙালি তাই বেগুন আমাদের কাছে ভালো লাগতেই পারে। আমরা অনেকেই বেগুন
পছন্দ করি কারণ বেগুন সেলুলোজ জাতীয় সবজি। যা খাওয়ার ফলে আমাদের হজম জনিত
সমস্যা দূর হয়ে যায়। বেগুন অনেকে অনেক ভাবে খেয়ে থাকেন তবে ভাতের সাথে ডাল ও
বেগুন ভাজি বিষয়টা ভাবলেই জিভে জল চলে আসে।
আরো পড়ুনঃ
হাড়ের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব
এই সুস্বাদুস ও লোভনীয় জাতের বেগুন খেতে আমাদের সকলের ভালো লাগলোও কিভাবে আমরা
এটি চাষ করবো তা আমরা জানি না এবং বাসায় কিভাবে অল্প পরিসরে চাষ করে বেশি ফলানো
যায় সে সম্পর্কে আমাদের কারো ধারণা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে বাড়ির ছাদে
বা ছোট্ট কোন স্থানেবেগুন চাষের পদ্ধতিগুলো সম্পূর্ণ বর্ণনা করবো।
চারা সংগ্রহ করা
বেগুন চাষের জন্য আমাদের প্রথমে একটি ভালো নার্সারি তে যাওয়ার পর সতেজ এবং
নির্মূল চারা গুলোকে বাছাই করে নিতে হবে। কারণ সতেজ চারা ছাড়া যে কোন চারা কিনলে
বা সংগ্রহ করলে সেগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই আমাদের ভালো মানের চারা
সংগ্রহ করতে হবে।
মাটি প্রস্তুতকরণ
প্রথমে একটি বড় টব বা বালতি নিন, এর সাথে হালকা দোয়াঁশ মাটি এবংহালকা বেলে থেকে
ভারী এটেল মাটি নিতে হবে।অ আর যদি আপনার কাছে দোয়াঁশ মাটি না থাকে তবে সব যে কোন
ধরনের মাটি নিলেই হবে। সেই মাটিগুলোর সাথে গোবর সার মিশিয়ে উপযুক্ত মাটি তৈরি
করে নিতে হবে।
মাটি হল গাছের জন্য মূল অংশ এই মাটি আপনি যত ভালোভাবে মিশ্রণ করতে পারবেন অথবা
তৈরি করতে পারবেন আপনার ফলন ততো ভালো হবে । তাই এই মাটিতে ভালোভাবে সার দিয়ে
মাটিকে বেগুনের চারার জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে। তবে আপনার কাছে যদি এটেল বা
দোয়া দোয়াঁশ মাটি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেগুলো ব্যবহার করবেন।
কারণ দোয়াঁশ মাটিতে বেগুনের চাষ ভালো হয় এবং ফলন ভালো হয়। তবে মনে রাখবেন
বেগুন চাষের জন্য মাটিকে উর্বর করা প্রয়োজন। এইভাবে মাটি প্রস্তুত করলে আপনি
ভালো ফল আশা করতে পারেন।
চারা রোপন
মাটিকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা হলে অবশ্যই কিছুদিন রেখে দিতে হবে হালকা পানি
দিয়ে। কেননা মাটিতে মিশ্রিত জৈব সার এবং গোবর সার গুলো যেন মাটির সাথে ভালোবাসা
যায়। এরপর আপনার পছন্দের বেগুন গাছটি টবে লাগিয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়
তবে এই কথা মনে রাখবেন, যে একটি টবে সর্বোচ্চ দুইটি বেগুন গাছ রোপন করতে পারবেন।
কেননা যদিও একটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অপরটি বেঁচে থাকা সম্ভবনা থাকবে। এরপর চারা
রোপণ হয়ে গেলে ভালোভাবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত পরিদর্শন
করতে হবে।
অন্যন্য বিশেষ পরিচর্যা
বেগুন যেহেতু বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। তাই এটি যে কোন সময় যেকোনো ভাবেই হতে
পারে। বেগুন গাছ বা চারা গুলোরোদ পছন্দ করে তাই এটিকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার
চেয়ে রোদালো স্থানে রাখাটা ভালো। তবে হালকা রোদেও বেগুনের চারাগুলোকে রাখা যাবে।
বেগুনের টবে নিয়মিত পানি দিতে হবে এবং প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিতে হবে পানি দেওয়ার
সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন পানি বেশি না হয়ে যায় এবং হঠাৎ শুকিয়ে যেন না
যায়। মাটি শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই বেগুনের টবে পানি দিতে হবে।
চারা রোপনের ২ সপ্তাহ পর ২ চামচ ইউরিয়া, ৩ চামচ ফসফেট, এবং দুই চামচ পাউস দিতে
হবে। এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করার পর টবের উপরে গাছের গোড়ায়
ভালোভাবে দিতে হবে। এগুলো দেওয়ার ফলে গাছটি অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং খুব
দ্রুত আমাদের ফল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়বে ।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
আমরা সকলে বেগুন চাষ করতে চাই কিন্তু আমরা কেউ জানি না কিভাবে এর বোকামিগুলো দমন
করতে হয়। এবং কি কি পোকামাকড় বেগুনের গাছে আক্রমণ করে সে সম্পর্কে জানিনা।
তাহলে চলুন- বাঁচার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো বেগুন ছিদ্রকারী পোকা এবং
বিভিন্ন ডগা নষ্ট কারী পোকা।
আরো পড়ুনঃ
কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায়।
রয়েছে যেমন ক্ষুদ্র লালমাকর ।এগুলো বিভিন্ন পরিবেশ এবং এলাকা ভেদে অবস্থান করে
থাকে। এছাড়াও বেগুন গাছের জন্য বিশেষ কিছু পোকার নাম হল- বিছা পোকা, পাতা মরণ
পোকা, ছাতরা পোকা ইত্যাদি। এসব পোকা গুলোকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার
জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ভালো উপাদানের গোপন টিপস
বেগুনকে ভালোভাবে ফালানোর জন্য তার পরিচর্যা করতে হবে। তার পরিচর্যা করার জন্য
আমাদের বিশেষ কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। উপযুক্ত ফলন পাওয়ার জন্য বেগুনের
গাছকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের
কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে যার ফলে আমরা বেগুনের ডাক্তার রক্ষা করতে পারবো।
এছাড়াও কিছু কিছু কীটনাশক রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের ফলে ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে
বেগুনের ফল ধরা শুরু হয়ে যায়। যার ফলে আমরা অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে বেগুন
ফলাতে পারে এবং নিজের এবং প্রতিবেশীর প্রয়োজন মেটাতে পারবো। বেগুনের কাছে রোগ বা
পোকার আক্রমণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। তার থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতি
মাসে বেগুনের গাছের ভালো কীটনাশ স্প্রে করতে হবে।
অতিরিক্ত টিপস
তবে বেগুন চাষ করে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য অবশ্যই গ্রোথ রেগুলেটর প্রতিমাসে
দুইবার বেগুনের গাছে স্প্রে করতে হবে ।যার ফলে আমরা ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ভালো
পরিমাণ একটি গাছ থেকে উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারি।
মন্তব্য বা শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, বেগুন চাষ সম্পর্কে অনেকেই অনেক মতবাদ ব্যাখ্যা করে গেছেন কিন্তু
এটি আমার প্র্যাকটিক্যালি পরীক্ষিত একটি তত্ত্ব। আশা করা যায় এটি আপনাদের জন্য
খুবই কার্যকর হবে। বেগুন স্বল্প পরিসরে বাড়ির ছাদের বা ছোট কোন জায়গায় চাষের
জন্য অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেলটা খুবই কাজে আসবে।
আশা করা যায় আজকের আর্টিকেলটা পড়ার মাধ্যমে আপনার মনের সমস্ত ছোটখাটো প্রশ্ন
দূর হয়ে গেছে। কিভাবে বেগুন চাষ করতে হয় এবং কিভাবে অল্প সময়ে অধিক ফলানো
সম্ভব তা নিয়ে আপনাদের মনে আর কোন প্রশ্ন না থাকার কথা। যদি আর্টিকেলটি ভালো
লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দিন। প্রতিনিয়ত এরকম তথ্য বা
আর্টিকেল আমাদের ওয়েব সাইটে পাবলিশ করা হয়
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url