খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা-তুলসী পাতা খেলে কি হয়?

 তুলসী পাতা আমাদের খুবই পরিচিত একটি পাতা। একে অনেকে তুলসী পাতা বললেও এটি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা।এটি অনেক গোপন রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলটিতে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

আদি যুগ থেকে শরীরের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে তুলসী পাতা। আমাদের বাড়ির আশেপাশের গজানো এই গাছটির গুনাগুনের শেষ নেই। বিভিন্ন আদি কবিরাজ এবং বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হয়েছে তুলসী পাতা হলো সকল রোগের মহাষৌধ । তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক।

পেটের সমস্যা দূর করে

আমাদের মধ্যে অনেকের রয়েছে যারা নিয়মিত এসিডিটি এবং গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকেন। যদি ভুগে থাকেন তাহলে আর কোন চিন্তা নেই!প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কয়েকটি তুলসী পাতা রস করে খেয়ে নিন অথবা চিবিয়ে খেয়ে নিন। তাহলে আপনারা এসিডিটি এবং পেটের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন। 
তুলসী পাতাতে থাকে এক ধরনের এসিড যা আমাদের পেটের সমস্যা অর্থাৎ এসিডিটিকে দূর করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হজমের সমস্যাকে কাছে ঘেষতে দেয় না। তাই নিয়মিত খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে আমরা সহজেই এসিডিটি এবং পেটের সমস্যা দূর করতে পারবো।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সুস্থতা হলে আমাদের সবচেয়ে বড় নিয়ামত। তাই শুধু সুস্থ থাকলেই হবে না সুস্থতার পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তিও থাকতে হবে। তাই আমাদের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজন কেউ প্রতিরোধ ক্ষমতা। 

তুলসীতে রয়েছে এমন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহজে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার বিকল্প নেই।

মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

তুলসীর পাতাতে থাকে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল। এটি এমন এক ধরনের বস্তু বা জেলের ন্যায় যা আমাদের মুখের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন-বিভিন্ন ধরনের ঘা, ফুসুরি ইত্যাদি দূর করে। এছাড়াও তুলসী ভেজানো পানি দিয়ে নিয়মিত কুলি করার ফলে আমাদের মাড়ি ও দাঁত ভালো থাকে এবং মুখের দুর্গন্ধও দূর করতে সাহায্য করে। তাই মুখে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য তুলসী পাতার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

হজম শক্তি বাড়ায়

তুলসী পাতার মধ্যে থাকে কর্মিনেটিভ নামক এসিড যা আমাদের পেট ফাঁপা এবং ফোলার মত সমস্যা অনায়াসে দূর করে। তাই সকালে নিয়মিত খালি পেটে তুলসী পাতার রস পান করলে বা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন এসিড দূর হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । তাই আমাদের উচিত নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।

সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখে

আমাদের মধ্যে অনেক লোক দেখা যায় যাদের হাই সুগার রয়েছে। এটি জটিল এক ধরনের রোগ বা অসুখ। এই অসুখের মাত্রা অনেক ভয়ঙ্কর লেভেলে পৌঁছাতে পারে। তাই আমাদের হাই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী আর এটি নিয়ন্ত্রণ না রাখলে -ব্রেন স্টোক, হার্ট অ্যাটাক, নিউরোপ্যাথি ইত্যাদির মতো একাধিক জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
আর এই সকল রোগের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য তুলসী পাতা হলো খুবই কার্যকারী। কেননা তুলসী পাতাতে এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যা আমাদের ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। তাই সুগার সমস্যার জন্য রোগের জন্য নিয়মিত তুলসী পাতার বিকল্প কোন ঔষধ নেই।

সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়

টেনশন বিহীন মানুষ হয়তো বর্তমান এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিভিন্ন জানা-অজানা কারণে আমরা টেনশনে জড়িয়ে পড়ি। স্বল্প সময়ের এই জীবনে টেনশন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দ্রুত আমাদের টেনশন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা এটি অনেক বড় এক ধরনের রোগ। যার ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। 

তাহলে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে এতক্ষণ প্রশ্ন জেগেছে যে কিভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসবো? তাহলে জেনে নিন, প্রতিদিন সকালে নিয়মিত সামান্য পরিমাণ তুলসী পাতার রস খেয়ে নিন। তুলসী পাতার রস খেলে আমাদের মন শান্ত থাকে এবং টেনশন দূর হয়। তাই সকল প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

তুলসী পাতাতে এমন এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ানো তাদের সাহায্য করে। যার ফলে মেটাবলিজমের গতি বেড়ে যায়। মেটাবলিজমের গতি বেড়ে যাওয়ার কারণে দেহ থেকে দ্রুত গতিতে মেদ কমতে থাকে। যার ফলে আমাদের ওজন দ্রুত হ্রাস পেতে বা কমতে শুরু করে।

জ্বর ,সর্দি ও কাশি দূর করে

তুলসিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জ্বর সর্দি ও কাশে দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের সকলের কাছে জ্বর ,সর্দি ও কাশি নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই দ্রুত এগুলো দূর করতে চাইলে নিয়মিত খালি পেটে অবশ্যই আমাদের তুলসী পাতা রস করে বা চিবিয়ে খেতে হবে। 
বিশেষ করে ঠান্ডা লাগার কারণে বুকে কফ জমে যায় তুলসী পাতার রস খাওয়ার কারণে দ্রুত শরীর থেকে কফগুলো বের হয়ে যায় যার ফলে আমরা সুস্থতা অনুভব করি। এভাবে আমরা তুলসী পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবা। তাই নিয়মিত এটির অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে

আমাদের শরীর থেকে এক ধরনের রেডিক্যাল বের হয়। তুলসীতে এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যা ফ্রি রেডিক্যাল এর প্রভাব কমায়। তাই খালি পেটে তুলসী খাওয়ার কারণে আমরা ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। যা আমাদের অনেক উপকারে আসবে। এমনকি এটি আমাদের পরবর্তীতে বাঁচার জন্য নতুন জীবন দিতে পারে।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট

তুলসী পাতাতে থাকে এক ধরনের বিশেষ অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের এক ধরনের রেডিকেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আমাদের শরীরে এই মেডিকেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না যার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থাকে বেঁচে যাই। তাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য।

ত্বক সুন্দর করে

খালি পেটে তুলসী পাতার রস খাওয়ার কারণে বা তুলসী ভেজানো পানি খাওয়ার কারণে শরীর থেকে এক ধরনের টক্সেন এসিড বের হয়ে যায়। এইটা টক্সিন এসিড গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের দাগ সৃষ্টি করে। তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে সেই এসিড গুলো বের হয়ে গেলে ত্বকে দাগ সৃষ্টি হতে পারে না এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাই। তাই আমাদের টানা এক মাস তুলসী পাতা ব্যবহার করতে হবে।

FAQ ( সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর)

প্রশ্নঃ তুলসী পাতা কখন খেতে হয়?

উত্তরঃ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলসী পাতা আমাদের জন্য উপকারী। আর এই উদ্ভিদ জাত উপাদান সেবনের ফলে আমাদের শরীরে থাকে সুস্থ থাকবে। তবে দিনে যে কোন এক সময় তুলসী পাতা খেলেই হয় কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে বেশি ভালো হয়।

প্রশ্নঃ সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে কি হয়?

উত্তরঃ এই বিশেষ পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, আমাদের দুশ্চিন্তা কমায, সর্দি কাশি দূর কর, হজমের সমস্যা দূর কর, মনকে শান্ত রাখ, টেনশন দূর করে ইত্যাদি সহ জটিল সমস্যা সমাধান রয়েছে এ বিশেষ তুলসী নামক পাতার মধ্যে।

প্রশ্নঃ কাদের তুলসী খাওয়া উচিত নয়?
উত্তরঃ এটি জরায়ুর সংকোচনের কারণ হতে পারে এবং গর্ভাবস্থার পর মাসিকের সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে। খুবই বেশি পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে রক্ত পাতলা হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহার পুরুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময় গুলোতে তুলসী পাতার ব্যবহার কমানো উচিত।

প্রশ্নঃ তুলসী পাতার রস খেলে কি কি উপকার হয়?

উত্তরঃ প্রকৃতিতে অবস্থিত সকল সবুজ পাতার মধ্যে বিশেষ এক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে একটি হলো তুলসী পাতা। এর গুনাগুন এবং উপকারিতা গুলো মানুষকে মুগ্ধ করেছে।
  • রক্তে সুগারের পরিমাণ কমায়
  • হাড়ের ব্যথা দূর করে
  • রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমায়
  • পেটের সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারী
  • সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যা দূর করে

লেখক এর মন্তব্য বা উপসংহার

যদিও তুলসী পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের এবং শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধন করে থাকে। এটি একটি উপকারী পাতা। কিন্তু তবুও এটি ব্যবহারের সময় অবশ্যই ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। 
সম্মানিত পাঠক, আশা করা যায় আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনার মনের সকল প্রশ্ন দূর হয়ে গেছে।আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দেন। নিয়মিত এরকম সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা হয়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১